মো. সাইফুল ইসলাম ,ধামরাই (ঢাকা) থেকে:
বিশ্ব যখন করোনা মহামারির আতংকে চুপছে গেছে ঠিক সেই মূহুর্তে ঢাকার ধামরাইয়ে গবেষক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শোনালেন এক স্বস্তির কথা।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংক হওয়ার কিছু নেই। গ্যানোডার্মা প্রজাতির মাশরুম করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে এক মহৌষধ। যা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।মাশরুমকে আমরা সকলেই ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ হিসেবে জানি।
তিনি আরও বলেন, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক থাকে যা মানুষের দেহের জন্য বেশ উপকারী। গবেষণায় উঠে এসেছে মহামারী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে এ ধরনের মাশরুমের নির্যাস কার্যকরি ভুমিকা পালন করবে।
মাশরুমের চা পান করেই করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। অবাক হলেও সত্য যে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’এফডিএ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে জার্নালে তুলে ধরেছেন অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
আমাদের বাংলাদেশেও সেই চায়ের খোঁজ দিলেন এক মাশরুম গবেষক ও উদ্যাক্তা ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন । গ্যানোডার্মা লুসিডাম নামের এই মাশরুমটির নির্যাস ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। আমাদের দেশে যাকে ঋষি মাশরুম নামে চেনেন অনেকে। মেহগনি, আম, জাম, কাঁঠাল, একাশিয়া, বাঁশ ইত্যাদি উদ্ভিদের গোড়ার দিকে গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুম জন্মাতে দেখা যায়। এগুলো গাছের উপর পরজীবি হিসেবে জন্মায়। এ মাশরুমটি শুকিয়ে তা গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে (চা পাতির মতো) সেই রস বা নির্যাস চায়ের মত পান করতে হবে।
গবেষক এবং উদ্যাক্তা ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মাশরুম বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন মাশরুমের এক গবেষণাগার। শুধু তাই নয়, তার গ্রামে করোনার উপসর্গ থাকা একাধিক বয়ষ্ক রোগীকে এ মাশরুমের চা পান করিয়ে সফলতাও পেয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার এলাকার ১১ জন বয়স্ক রোগীকে এ গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুমের চা পান করিয়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগ থেকে সুস্থ করে তুলেছেন।
৭ থেকে ১০ দিন গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুমের চা পান করানোর পর সুস্থ হয়ে উঠেন এই গ্রামের আব্দুস সালাম (৫২)। তিনি বলেন, আমার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করি। পরীক্ষার পর জানতে পারি আমার করোনা হয়েছে। পরে আমার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন আমার কথা শুনে আমাকে প্রতিদিন মাশরুমের চা পান করতে বলেন। ৭ থেকে ৮ দিন এই চা পান করার পর আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আগের থেকে এখন খুব ভালো আছি এবং পুরোপুরি সূস্থ্য রয়েছি।
এ বিষয়ে ছত্রাক ও মাশরুম গবেষক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ২হাজার বছর পূর্বে প্রাচীণ চীনে এর ব্যাবহার শুরু হয়। তারপর সারা বিশ্বে এটি গবেষণার বিষয় হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, গ্যানোডার্মা লুসিডাম মুলত মাশরু মটির বৈজ্ঞানিক নাম। চীন-জাপানে এটি লিংঝি এবং রেইসি মাশরুম বলে পরিচিত। বিভিন্ন জটিল রোগে প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্য সারা বিশ্বে ইহার ব্যবহার দিন- দিন বাড়ছে। আমরা করোনা থেকে মুক্ত হতে ভ্যাকসিনের পেছনে ছুটলেও এর উৎপত্তি স্থল চীন ও তার প্রতিবেশী দেশে গ্যানোডার্মা মাশরুমের ব্যবহার যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে করোনা রোগীর উপর এর প্রায়োগিক গবেষণা।
আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, হংকং, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, এমনকি আফ্রিকার নাইজেরিয়াতেও এর উপর গবেষণা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমেরিকা-ইউরোপসহ করোনার উৎপত্তিস্থল চীনেও বেড়েছে এই মাশরুমের ব্যবহার। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র মাশরুমটি করোনার প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য এফডিএ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে।
এই মাশরুমটি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ম্যাজিকের মত কাজ করে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা এ মাশরুমটি করোনার বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে জার্নালে তুলে ধরেছেন।
তিনি আরও জানান, এ মাশরুমের রস শরীরে লিম্ফোসাইট ও বি-সেল তৈরির মাধ্যমে ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। পরবর্তী করেনারভাইরাস প্রতিরোধে একই ভাবে মাশরুমের রস বা চা দারুণভাবে কাজ করছে। আমাদের দেশেও এর ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। যাতে করে টিকার পাশাপাশি মানুষ এ মাশরুমের রস পান করলে অনেকাংশে মৃত্যু ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
কিভাবে এ মাশরুমটি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করে এমন প্রশ্নে ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্যানোডার্মা মাশরুমের নির্যাস অস্থিমজ্জায় আরএনএ এবং ডি এনএ’ র সংশ্লেষণ বাড়ায় যাতে বেশি বেশি লিম্ফোসাইড তৈরী হয়, ফলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। করোনা ভাইরাস শরীরে প্রচুর প্রো-ইনফ্ল্যামেটরী সাইটোকাইনিন তৈরি করে যা মালটি-অর্গান ফেইলিউরের জন্য দায়ী।
পক্ষান্তরে গ্যানোডার্মা মাশরুমের নির্যাসে থাকা পলিস্যাকারাইড ও ট্রাইটারপেনয়েড সাইটোকাইনিনের ক্ষতিকর প্রকোপ থেকে দেহকে রক্ষা করে। ভাইরাসের প্রোটিন-কোট সংশ্লেষ এ বাধা দিয়ে ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি রোধ করে। এভাবে গ্যানোডার্মা মাশরুম করোনা জনিত মৃত্যু ও হস্পিটালাইজেশন কমায়।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও অণুজীব বিশেষজ্ঞ ড. আলী আজম তালুকদার জানান, করোনা প্রতিরোধে টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পাশাপাশি খাদ্যভ্যাসে এমন খাবার গ্রহণ ও স্বাস্থবিধির সচেনতা মেনে চললে করোনা প্রতিরোধ করা সহজ হবে। আর মাশরুমের কোন পাশ্বপ্রতিক্রয়া নেই। শুধু ভাইরাস প্রতিরোধ নয়, শরীরের আরও নানাবিধ উপকার করে থাকে।