দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন প্রায় দেড় কোটি নতুন ভোটার। সাম্প্রতিক এক জরিপও বলছে, ৭২ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে ইচ্ছুক। ফলে ভোটে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নজরও তরুণ ভোটারদের দিকে। এর অংশ হিসেবে ইশতেহার ঘোষণার আগে দেশের প্রায় ৩০০ তরুণের মতামত জেনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে অংশ নেওয়া তরুণরা পরে বলেছেন, তাদের পরামর্শ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বিবেচনা করা হবে বলে তারা আশা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত ৩০০ আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসাবে ৫ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন, যাদের অধিকাংশই তরুণ ভোটার। মোট ভোটারের প্রায় ১৩ শতাংশ নতুন ভোটার হয়েছেন।
জানা গেছে, তরুণ ভোটারদের একটি বড় অংশই শিক্ষার্থী। অনেকে সদ্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল বা মেট্রোরেলের সুবিধা; দেশের অবকাঠামোর পাল্টে যাওয়াটা এই প্রজন্মের চোখের সামনে। আগামীর বাংলাদেশকেও আরও উন্নত দেখতে চান তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরিফুল আলম বলেন, প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করছে। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাকে ভোট দেব। শুধু অবকাঠামো নয়, আমরা চাই গুণগত উন্নয়ন। বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৭২ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে ইচ্ছুক। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীকাল ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ।
ইশতেহার ঘোষণার আগে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়ে তরুণদের ভাবনা, চাওয়া জানতে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) জানিয়েছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে তরুণদের ভাবনা ও তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো জানতে সম্প্রতি সরাসরি বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ সংগঠক ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে দুর্দান্ত কাজ করে যাওয়া তরুণদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন শেখ হাসিনা।
লেটস টক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় তরুণরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর তারাও নিজেদের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের অংশ বলে মনে করছেন। তারা বিশ্বাস করেন, সামনে ইশতেহার ঘোষণায় তাদের দেওয়া পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। প্রায় ৩০০ তরুণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, পররাষ্ট্র নীতি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু থেকে শুরু করে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন এবং সেখানে তরুণদের ভূমিকা কী হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। নারীর নিরাপত্তা, নারী ক্ষমতায়নে তাদের চাকরির পরিবেশ তৈরিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা ও আমাদের করণীয় নিয়ে তরুণদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার, নারীর অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেই সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর উন্নয়নে সামনে সরকার আরও কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে এ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে তরুণদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের মধ্য থেকে আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা দেখতে পাচ্ছি। আশা করি, এখান থেকে কেউ একজন হবেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’