ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রকাশিত প্রতিবেদন ভুলে ভরা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আজ রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সিপিডি বলছে, গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সিপিডির প্রতিবেদন আমি পড়েছি। বিভিন্ন বড় গ্রুপগুলো যে ঋণ নিয়েছে, সেগুলো সন্নিবেশিত করে তারা বলতে চেষ্টা করেছে এ সব অর্থ লোপাট হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে কিছু ব্যাড লোন আছে, আর কিছু অনিয়ম হয়নি সেটাও সঠিক না। কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু সবগুলোকে একত্র করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এগুলো সবই জানা বিষয়।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সিপিডি বলেছে আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৭৫ শতাংশ না কি আসে বৈদেশিক সাহায্য থেকে। এটা পুরোপুরি ভুল ও বোগাস। আজ পর্যন্ত আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৩৫ শতাংশ এসেছে বৈদেশিক সাহায্য থেকে। একটা গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে এমন ভুল কীভাবে থাকে? তাহলে এ প্রতিবেদনে আরও ভুল আছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যখন গবেষণায় এত বড় ভুল থাকে, এটা কোনো ছোট ভুল না, অসত্য থাকে, তাহলে তো সেই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। যারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাদের নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে ‘দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট ও করণীয়’বিষয়ক এক মিডিয়া ব্রিফিং করে সিপিডি। দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মূল্যায়ন তুলে ধরে সংস্থাটি।
সিপিডি বলছে, ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকে ব্যাংকগুলোর অবনমন হচ্ছে। গত ১৫ বছরে এই খাত থেকে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে এ ধরনের ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন টাকা বা ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, পুরো ব্যাংকিং খাত কিছু ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়েছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। খেলাপি ঋণ কমাতে কয়েকটি উদ্যোগ জরুরি। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার, আইন সংশোধন এবং তথ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি।