অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কমেছে

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানি অপ্রচলিত বাজারে বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এ সময়কালে সামগ্রিকভাবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যাদির ভিত্তিতে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজিএমইএর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (ইইউ) কমেছে দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ, অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তথ্যমতে, অন্যতম গন্তব্য কানাডায়ও পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ মিলিয়ন ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৯৬৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ৫৩ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৯ হাজার ৭০ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৭৮ মিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া প্রথম পাঁচ মাসে কানাডায় রপ্তানি হয়েছে ৬০৬ মিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৬২৩ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে পোশাক রপ্তানি কমেছে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, সুইডেন, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়ায়। রপ্তানি বেড়েছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্পেন, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও লুক্সেমবার্গে।
জানা গেছে, দেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এর বাইরে যেসব দেশে পোশাক রপ্তানি হয় সেগুলো অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে রপ্তানি কমেছে ভারত ও মেক্সিকোতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে চলে যায় রাশিয়া। দেশটিতে অনেক দিন ধরেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল।
তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ পাঁচ মাসে রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। রাশিয়া ছাড়াও অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া রিপাবলিক, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলি ও ব্রাজিলে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে যখন রপ্তানিকারকরা একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জেঁকে বসে; পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় পতিত হয়। এর প্রভাব পড়ে পোশাক রপ্তানিতে। ক্রেতাদের চাহিদা কমে যায়। সেই রেশ এখনো কাটানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, পণ্যের মূল্য বাড়ানো দূরে থাক, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে কম মূল্য পাচ্ছি। মূল্য বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর আগে ও পরে ক্রেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে। দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। বরং তারা পণ্যের দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। পণ্যের দাম না পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা উৎপাদন কমিয়েছে। ফলে রপ্তানিও কমছে।
বিজিএমইএর এই পরিচালক আরও বলেন, ক্রেতারা নানা ধরনের শর্ত দিচ্ছেন; পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি এবং করে যাব। তারা পণ্যের দাম না বাড়ালে আমরা শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দেব কীভাবে? এর পরও মালিকরা যে যেমন পেরেছেন ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছেন।