অর্থনীতি ডেস্কঃ শেয়ারবাজার স্বাভাবিকভাবে চলছে না, কাটছে না এর টানা সংকট। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে, শিগগিরই সংকট কেটে যাবে। কিন্তু মাস যায়, বছর যায়, সেই শিগগির আর আসে না। করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জাতীয় নির্বাচনসহ একের পর এক নতুন ইস্যু আসছে।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাজারে প্রভাব ফেলেছে। তৈরি করেছে নতুন আতঙ্ক। ফলে দিনদিন উধাও হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। আসছে না নতুন বিনিয়োগ। এ কারণে তারল্য সংকট ভয়াবহ। ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বাজার আটকে রাখতে চাইছে সরকার। নির্বাচনের পর বাজার নিয়ে চিন্তা করবে। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে অপেক্ষা করছে। তবে মন্দার মধ্যেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চলছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে তার বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টে রয়েছে। গত দুই বছর এর আশপাশেই রয়েছে সূচক। আলোচ্য সময়ে গড় লেনদেনও ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরকারের উচ্চমহল থেকে জানানো হয়েছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে সূচক ৪ হাজার পয়েন্টে নেমে আসবে। এতে বিনিয়োগকারীরা পথে বসবে। বেশকিছু লোক আত্মহত্যা করতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, এর আগে শেয়ারবাজারে আত্মহত্যার নজির রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিরোধী দলগুলো আন্দোলনের নতুন ইস্যু পাবে। তাই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। এসব কারণে আগামী নির্বাচনের আগে বাজারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ভিসানীতি বাজারে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।
এদিকে একক দিন হিসাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার ২৮৭টি কোম্পানির ৭ কোটি ৮৯ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৪৫০ কোটি ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৭৮টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪০টির। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে ৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।