ডেস্ক নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল নেতাদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। এ সময় নিজেদের ঐক্য ধরে রেখে ভোটের কাজ করতে হবে। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক তার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার (৬আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভার সূচনা বক্তব্যের পরে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে তিনি সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আপনারা এখন তাদের কাছে গিয়ে বলবেন-আওয়ামী লীগ কী কী উন্নয়ন এ পর্যন্ত করেছে এবং ভবিষ্যতে কী করবে। অনেক কাজ আমরা শুরু করেছি, সেগুলো শেষ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্য সবাইকে তৎপর হতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি লক্ষ করি, মেসেজও পাই, এক এলাকায় আমাদের সংসদ-সদস্য বা নেতার বিরুদ্ধে আমাদের লোকই নানা ধরনের অপ্রপ্রচার চালায়। আমি শুধু লিখলাম-থুতু উপরের দিকে ফেললে নিজের গায়েও পড়ে। যাকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে যদি খাটো হয়, তাহলে দলই খাটো হবে আর নৌকার ভোট কমবে। একজনকে ছোট করে, খাটো করে যদি কেউ নমিনেশন চায়, সে তো বড় হতে পারবে না, ভোটেও জিততে পারবে না। মানুষের মন থেকেই মুছে যাবে। আমরা যে এত কাজ করলাম, সেই কাজই তো থাকবে না, ম্লান হয়ে যাবে। সেটাই সবাইকে মনে রাখতে হবে।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, নমিনেশন আমরা যখন দেব, আমাদের কতগুলো নিয়ম আছে। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না। সারা দিন যেমন দেশ গড়ার কাজ করি, সংগঠনের কাজও করি। কোথায় কার কি অবস্থা, আমরা ৬ মাস পর সার্ভে করি। এমপিদের অবস্থা বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম তার একটি হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে নির্ভর করে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। সেটা মাথায় রেখে আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যখন নমিনেশন দেব অবশ্যই আমাদের মতামত থাকবে কাকে মনোনয়ন দিলে ওই সিটটা আমরা পাব। সেখানে এসএমএস পাঠালে, কারও গিবত করলে সে কথা শুনব-তা কিন্তু না। এটা আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, নৌকা মার্কায় যাকেই মনোনয়ন দেই, ভালো-মন্দ কানা, খোঁড়া, যাই হোক-প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আপনারা তাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। এ সময় সবাইকে হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির আহ্বানে তৃণমূলের সব নেতাকর্মী একসঙ্গে হাত তুলে আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের জন্মই হয়েছে, অস্ত্র হাতে, সন্ত্রাস করে খুন-খারাবির মধ্য দিয়ে। জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা ক্ষমতা দখল করেছিল। মানুষ তাদের কাছে কী আশা করতে পারে? মানুষ আশা করে আওয়ামী লীগের কাছে। কারণ আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছে এ দেশের মাটি ও মানুষকে নিয়ে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কাজেই সেই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মানুষের পাশে থেকে মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ কর্মসূচি-অনেক কিছু তারা করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও শক্তিশালী সংগঠন আছে বলেই তারা কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তারাই ধীরে ধীরে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা সময়মতো কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বক্তৃতা করতে দেইনি। দেব না। যারা সংগঠন করে আসবে তারাই সুযোগ পাবে। এভাবেই আমরা আস্তে আস্তে দলকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসব।
এর আগে সভাপতির সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের মূলশক্তি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই, জনগণই প্রভু। জনগণের কাছেই আমরা দায়বদ্ধ। জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করি। আমরা কতটুকু করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে কী করব; তা শুধু জনগণকেই বলি, অন্য কাউকে নয়। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোনো এক বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে নাকি দেশে দারিদ্র্য কমেছে! আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই আজকে দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কোনো বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র্য কমে তবে আগে কেন এই ১৮ ভাগে নেমে আসেনি।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণেই আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।