সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে। মূল বেতনের শতকরা পাঁচ ভাগ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে উন্নয়নশীল দেশের বাস্তবায়ন করবে কে-এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে সেরকম একজন নেতা দেখান। আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মর্যাদা পেলাম, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে এটা বাস্তবায়ন করবে কে। সেরকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি, উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশকে উন্নত করতে হলে, আমাদেরই দরকার। তাই জনগণকে এটিই বলব, বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে আজকে আমরা দেশটাকে এই উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি। দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। আজকে বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র তিন ভাগ। ডিজিটাল পদ্ধতি হয়েছে, আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছে। ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসে উপার্জন করছে। কাজেই আমরা পিছিয়ে থাকব না, আমরা এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন, এই দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসাবে বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট নিয়ে অনেকে কথা বলেন। অনেকে সমালোচনা করছেন। আমি খুশি যে তারা বাজেট নিয়ে ভাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে কিছু লোক আছে যারা কোনো ভালো কিছু দেখেন না। দেখতে চান না। তাদের কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা। অপপ্রচার চালানো। আমরা আমাদের কাজ করছি। জনগণের যাতে ভালো হয় সেই চেষ্টা করছি। কারণ আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা জনগণের কথা ভাবে, জনগণের জন্য কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা, এত কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ‘সময়ে সময়ে কালো মেঘ’ দেখা গেলেও সবাইকে অভয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভয়ের কিছু নেই। সমস্যা এলেও তা মোকাবিলা করতে হবে। তিনি ঘাবড়ে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি, কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকু বলব, এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময়ে সময়ে সমস্যা তো আসেই। এ সমস্যা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না। এটা মোকাবিলা করতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ নেই বলেও জানান তিনি। সবাইকে অভয় দিয়ে জনগণের উদ্দেশে সংসদনেতা বলেন, সময়ে সময়ে কালো মেঘ দেখা যায়। কথায় বলে ‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। হারাশশীর হারা হাসি অন্ধকারে ফিরে আসি’।
সংসদনেতা বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কারও মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। সেই বিজয়ী জাতি হিসাবে দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ল্যাক্রোইক্স ও ক্যাথরিনের বৈঠক : বাসস জানায়, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এবং ক্যাথরিন পোলার্ড রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। জাতিসংঘ সদস্য অস্থিতিশীল দেশগুলোতে শান্তি রক্ষায় অবদানের জন্য তারা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলরা বলেছেন, জাতিসংঘ সফলভাবে তার শান্তিরক্ষা অভিযানের ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা প্রেরণকারী দেশ। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ নিযুক্ত রয়েছেন। ক্যাথরিন পোলার্ড যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন রোধে ট্রাস্ট ফান্ডে বাংলাদেশের অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারী নিরাপত্তা এবং (জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে) নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব অর্থায়নে প্রশমন ও অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।