গাইবান্ধায় এলসিএস প্রকল্প:  নারী শ্রমিক নিয়োগে প্রকৌশলীর দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকৌশলী তাহাজ্জত হোসেন এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আছে লেবার কন্ট্রাক্ট সোসাইটি (এলসিএস) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ৪৫ জন দুস্থ অসহায় নারী শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে গত  বছরে প্রায় সাড়ে ৪০ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা হতে বঞ্চিত হয়েছে।

এর ফলে একদিকে যেমন অসহায় মহিলারা কাজ থেকে বঞ্চিত হলো অপরদিকে এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কার না হবার কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।  এখন এ চিত্র আরো বেড়ে গেছে। অপর দিকে সময় মতো নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে উপজেলার অসহায় নারী শ্রমিকগণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, সরকার গ্রামীন দুস্থ অসহায় কর্মঠ মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর লেবার কন্ট্রাক্ট সোসাইটি(এলসিএস) প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কের মেরামত কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহিলা শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বিগত অর্থ বছরের শুরুতে গাইবান্ধা জেলার সকল উপজেলায় এলসিএস প্রকল্পের আওতায় মহিলা শ্রমিক নিয়োগের নির্দেশনাসহ তাগাদাপত্র প্রেরণ করেন গাইবান্ধা জেলা স্থানীয় সরকার  প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস। সেই মোতাবেক জেলার সকল উপজেলায় এলসিএস প্রকল্পে মহিলা শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন সড়কের মেরামত কাজ সম্পন্ন করে। নিয়োগকৃত মহিলা শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৭ হাজার ৫শ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রকৌশলী তাহাজ্জত হোসেন অজ্ঞাত কারণে গত বছরে পলাশবাড়ী উপজেলায় ৪৫ জন মহিলা শ্রমিক নিয়োগ দেননি।

এই ৪৫ জন শ্রমিক নিয়োগ না দেওয়ার কারণে এলজিইডিথএর অধীনে থাকা অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়কের মেরামত কাজ একেবারেই হয়নি। এমন নির্দেশনা পাওয়ার পরে নানা অজুহাত দেখিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের প্রকল্প নতুন বছরে এসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে উপজেলার নারী শ্রমিকগণ।

উপজেলা প্রকৌশলী তাহাজ্জত হোসেন বলেন, নানা জটিলতায় শ্রমিক নিয়োগ না দেওয়া হয়নি,যেহেতু এক বছরের প্রকল্প এতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার নতুন করে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করে জানা যাবে পরবর্তীতে নিয়োগ প্রদান করা হবে কিনা। গত বছরে উক্ত প্রকল্পের নিয়োগ না করায় শ্রমিকদের ক্ষতি হয়েছে কিনা না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী জানান,স্থানীয়রা যদি জটিলতা সৃর্ষ্টি করে তো আমার করার কি আছে।

জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম জানান, উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রম প্রতি বছর চলমান রয়েছে। চলতি বছরে উক্ত প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। গত বছর কি কারণে প্রকল্পের নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি তা অফিসিয়াল ভাবে জানা হবে।

তিনি  আরো জানান, উপজেলায় স্থানীয় নানা জটিলতায় নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না সংশ্লিষ্ট অফিস।

পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ জানান, এলসিএস প্রকল্পে নারী শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি আমাকে অবগত করাই হয়নি। আর নিয়োগ না দেয়ার বিষয়টি একান্ত উপজেলা প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত সিন্ধান্ত যা বেআইনি।

গতবছর প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগ না হওয়ায় শ্রমিকগণ বঞ্চিত হয়েছে । এ দায় কার জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, বিষয়টি দুঃখজনক উক্ত প্রকল্পের নিয়োগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর দায় উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের কারণ এটা তারা দেখভাল করে থাকেন।

স্থানীয় সচেতন মহল ও বঞ্চিত একাধিক নারী শ্রমিকগণ বলেন, উক্ত প্রকল্পের নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করায় স্থানীয় জনগণ যেমন দুভোর্গ পোহাতে হয়েছে তেমনি নিয়োগ না পাওয়া প্রাপ্ত সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়েছে নারী শ্রমিকগণ। উক্ত প্রকল্পের নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়ার পিছনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যারা জড়িত বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।