সাখাওয়াত হোসাইন ,কক্সবাজার থেকে:
কখনও রোদ, কখনও কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। এই আবহাওয়াতেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আকাশের সঙ্গে সাগরের মিতালি দেখতে আসছেন পর্যটকরা।
করোনা প্রতিরোধে সরকার দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো দীর্ঘ পাঁচ মাস পর সরকার গত ১৯ আগস্ট পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে প্রাণবন্ততা ফিরছে সৈকতে।সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে বিনোদনপ্রেমী লোকজন। সবাই মেতে উঠছেন সাগর তীরে। করছেন আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়। তবে করোনার মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। দিচ্ছেন উদাসীনতার পরিচয়।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, ডায়াবেটিক ও সায়মন বিচ পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্রস্নান ও কিটকটে বসে সময় পার করছেন। এছাড়া বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, ছবি তোলাসহ আনন্দমুখর সময় পার করছেন তারা। তবে কারো মুখেই ছিল না মাস্ক। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণটুকুও।
ঢাকা গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা হাছান মাহমুদ আলোকিত স্বদেশকে বলেন, তিন বছর পর কক্সবাজার এসেছি মুক্ত বাতাস ও সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর জন্য। কিন্তু এখানে এসে দেখি প্রায় পর্যটকের মুখে মাস্ক নেই।
রংপুর থেকে আসা আরেক পর্যটক বলেন, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ৫ দিনের জন্য কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। তবে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি ভালো লাগছে না।
অন্যদিকে কিছু সংখ্যক পর্যটকদের অভিযোগ, কক্সবাজারে ৪০ থেকে ৫০টি উন্নতমানের হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের দখলে থাকে। যার কারণে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমস্যায় পড়েছেন। ভবিষ্যতেও এ সংকট থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম হোটেলকক্ষ বুকিং দিয়ে আসতে হচ্ছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে যে হোটেল অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার কথা সেটিও তদারকির অভাবে অসাধু হোটেল মালিকরা বিক্রি করছে।
হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, হোটেল-মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার পর থেকে প্রচুর পর্যটক কক্সবাজারে আসছেন। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন পর্যটক একটু বেশি আসে। এখন একটি হোটেলে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলের অর্ধেক রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে সমুদ্র সৈকতের প্রত্যেক পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা পালন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি চলছে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী হ বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় সতর্কাবস্থায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার রোধে জেলা প্রশাসন ছাড়া পুলিশের সাদা পোশাকে এবং ছদ্মবেশে নারী-পুরুষ পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং করা হচ্ছে নিয়মিত।