আলোকিত প্রতিনিধি:
ঋতুর রানি শরৎকাল। বাংলার আকাশে নীলাম্বরে পেঁজা পেঁজা শুভ্র মেঘ, আর কাশফুলের কাব্যে রচিত হয়েছে বাংলার প্রকৃতি। শরৎ মানেই আকাশে নরম পেঁজা তুলোর মতো শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানো আর দিগন্তজোড়া প্রান্তরে কাশফুলের মনোরম দৃশ্য।
ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব। সদরপুর উপজেলার ২নং আকোটের চর ইউনিয়নের আকোট বাজার সংলগ্ন একটি চর। বিশাল এই চরজুড়ে ছেয়ে গেছে কাশবন। সাদা রঙের কাশফুলে ভরে উঠেছে কাশবন। দূর থেকে দেখে মনে হবে বিশাল আকৃতির সাদা বিছানা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। যা জেলার আর কোথাও এতো বড় কাশবন খুঁজে পাওয়া যাবে কি না জানা নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ যতদূর চোখ যায় শুধু কাশবন আর কাশফুল। করোনা মহামারিতে গ্রাম কিংবা শহরের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তির মায়াবি আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে দিগন্তজোড়া কাশফুল। সেই কাশফুলের রাজ্যে গাঁ ভাসাতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছে। ছবি আর সেলফি তুলে স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরাবন্দি করছে নিজেদের।
বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি টিমসহ বন্ধু বান্ধাব ও পরিবার নিয়ে অনেকেই ঘুরে আসা, তাদের মুখে গল্প শুনে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে প্রতিদিনই অনেক মানুষ ঘুরতে বা দেখতে যাচ্ছেন এই কাশফুল। ঘুরতে গিয়ে প্রত্যেকেই যেন নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝে।
ঘুরতে আসা অনেকেই জানান, কালের পরিক্রমা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকে হারাতে বসেছে শরতের কাশফুল। একটা সময় ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় কাশবনের কাশফুলগুলো দোল খেতো মৃদু বাতাসে। এখন ফরিদপুরের গ্রাম-গঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমি ফসলের ক্ষেত।
নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহরগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে শুইয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনের ভেতরে। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, দোন তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। পদ্মার চর এলাকাসহ ফরিদপুরের কিছু নদী এলাকায় কাশবন দেখা যায়। তখন মানুষ নিজের অজান্তে হারিয়ে যায়। অতীত হাতড়ে থাকে।
শরৎ এলেই নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেলা, কাশফুলেরই সঙ্গে মিসে করছে যেন খেলা’ ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতি দুই মাস পর পর একটি ঋতুর বদল হয়ে থাকে। একটা সময় আষাড় এবং শ্রাবণ মাস মিলেই বর্ষাকাল হতো। প্রকৃতির আপন ইচ্ছায় তা প্রায় পাল্টে যাওয়ার অতিক্রম। কিন্ত মাসের পরিবর্তন হলেও কাল অপরিবর্তিত রয়েছে।
তাই ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বকজুড়ি খেয়াঘাটের ওপারে রোপা আমনের মাঠ পেরিয়ে মধুমতির চরে প্রকৃতির আপন সাজে সেজে কাশফুলে দোলা দিচ্ছে।
কাশবনে ঘুরতে আসা সদ্য বিবাহিত সাদ্দাম হোসেন ও মাইশা দম্পতি জানান, শহরের কোলাহল আর ঘরবন্দি থাকতে থাকতে মনমানসিকতা কেমন যেন হয়ে গেছে। তাই দূরত্ব হলেও বিকেলটা ভালোই কেটেছে। এখানে না এলে বোঝা যাবে না। অন্যরকম অনুভূতি। মন ভরে ওঠে, মুগ্ধ হয়ে যায়। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় আর আবেশে মনটাও যেন নরম হয়ে যায়।